পৃথিবীর ইতিহাসের এ যাবৎকালে যত মহামারী হয়েছে, তার বিস্তার সাধারনত কোনো বিশেষ অঞ্চলে বা দেশে বা মহাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল । অষ্টাদশ শতাব্দীর প্লেগ ছিল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও বিস্তৃত মহামারী । পুরো ইউরোপজুড়েই প্লেগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল । কিন্তু এইচআইভি/এইডস আজ পুরো পৃথিবীব্যাপীই ছড়িয়ে পড়েছে । এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, অর্থাৎ এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার দীর্ঘ সময় পর এর লক্ষণ রোগীর শরীরে ধরা পড়ে । রোগ নির্ণয় হওয়ার আগ পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত থাকে, এ অবস্থায় সে তার নিজের অজান্তেই আরো অনেকের মাঝে এই ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে । এ সকল বিভিন্ন কারণে এইচআইভি/এইডসের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে বা অনিরাপদ যৌন মিলনে যারা অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রে এইচআইভি/এইডস হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। এইচআইভি/এইডস ধর্ম, বয়স, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো মানুষের হতে পারে।
বাংলাদেশ এখনও এইচআইভি,এইডস সংক্রমনের জন্য কমঝূঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে বিবেচিত হলে ও এই ঝুঁকি বৃদ্ধির যথেষ্ঠ কারণ এখানে বিদ্যমান । সংক্রমনের ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ হিসাবে অন্যতম একটি হলো ভাসমান যৌনকর্মীদের প্রতি বৈষম্য ও প্রচলিত কুসংষ্কার, যা তাদেরকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত করে । এছাড়া অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে -
এইচআইভি এবং এইডস সংক্রমণে অল্প বয়সি জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি
কৈশোর/যৌবন পূর্বকালকে বলা হয়ে থাকে মানুষের জীবনে ঝড়-ঝঞ্জার সময়। এ সময়ের শারীরিক পরিবর্তনের সংগে পাল্লা দিয়ে মনোজগতেও ঘটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন । UNAIDS (2007) এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর নতুনভাবে এইচআইভি সংক্রমিতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি হচ্ছে ২৫ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরী/যুবক-যুবতী। তাদের বয়স, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং আর্থিক নির্ভরশীলতাসহ নানাবিধ কারণে কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতীরা এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। বিশ্বব্যাপী পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায়: (ক) অল্প বয়সিরা এইচআইভি এবং এইডস এর কথা শুনে থাকলেও এ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যাপারে তারা সচেতন নয়; (খ) যৌনকর্মে সতিনা অল্প বয়সিদের অনেকেই মনে করে না যে তারা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে; এবং (গ) যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব যুব-কিশোরদের মধ্যেই বেশি। এছাড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে সুযোগের অভাব এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতা বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের যুবসমাজকে এইচআইডি সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের কারণসমূহ:
বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের (IDUs) মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ হার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এইচআইভি সংক্রমণের অন্যতম কিছু কারন হলো ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের মধ্যে একই সুচ পর পর ব্যবহার করা, যৌনকর্মীদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করা এবং পেশাগতভাবে রক্ত বিক্রির প্রবণতা।
এইচআইভি/এইডস এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -একাধিক ব্যক্তির একই সিরিজ/সুই ভাগাভাগি করে ব্যবহার; পেশাগতভাবে রক্ত বিক্রি; অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক ; এবং সমকামিতা।
ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহারের কৌশল-
এইচআইভি এবং এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে 'না' বলা একটি বড় কৌশল। অল্প বয়সি ছেলে-মেয়েরা প্রায়শই আবেগ দ্বারা চালিত হয়, যুক্তি দ্বারা নয় । জীবনের সমস্যা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে অনেক সময় 'না' বলার প্রয়োজন হয় এবং নিজ মত প্রতিষ্ঠা করতে হয়, যা অল্প বয়সিদের জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ।
এমন হতে পারে যে, একজন শিক্ষার্থী তার সহপাঠী বা প্রিয় বন্ধুর একটি প্রস্তাব পেল যা তাকে যৌন আচরণ করতে প্ররোচিত অথবা মাদকাসক হতে প্রভাবিত করতে পারে। শিক্ষার্থী কিছুতেই এ প্রস্তাব মানতে চায় না, আবার বন্ধুত্বও নষ্ট করতে চায় না। এমন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে 'না' বলতেই হবে । একবার এবং বারবার। সহপাঠী বন্ধুটি এবং অন্যরা তাকে জোর করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাকে দৃঢ়চেতা হতে হবে। 'না' বলার জন্য যা করা যেতে পারে-