প্রত্যেক দেশ, অঞ্চল, সংস্থা অথবা প্রকল্প তাদের কাজের সুবিধার্থে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা (ওয়ার্কিং ডেফিনিশেন) ঠিক করে থাকেন। কারণ এই সংজ্ঞায়িত করার ফলে একদিকে যেমন লক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়, ঠিক তেমনি,অন্যদিকে তাদের জন্য কার্যকর কর্মসূচী সহজেই পরিকল্পনাও করা যায় । যার ফলে মান সম্মত সেবা দেয়া সম্ভব হয়।
•মহিলা ও পুরুষ যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দের;
• ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকগ্রহণকারী:
• পেশাগত রক্ত বিক্রেতা;
• হিজড়া;
• সমকামী পুরুষ;
•দূরপথে দেশে-বিদেশে ভ্রমণকারী;
• পরিবহন শ্রমিক;
• নির্মাণ, ঘাট, ডক শ্রমিক; এবং
•অল্পবয়সি জনগোষ্ঠী ইত্যাদি ।
• মহিলা ও পুরুষ যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দের;
• ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকগ্রহণকারী; এবং
• পেশাগত রক্ত বিক্রেতা।
• বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কোন কোন এলাকায় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের (IDUs) মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ হার মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে;
• ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের মধ্যে একই সুচ পর পর ব্যবহার করার অভ্যাস আছে। তাছাড়া এদের একটি বড় যৌনকর্মীদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করার এবং পেশাগত রক্ত বিক্রির প্রবণতা এইচআইভি সংক্রমণের একটি বড় কারণ;
• যৌনকর্মীদের কাছে খদ্দেরদের যাতায়াত বেশি, কিছু নিয়মিত কনডম ব্যবহারের প্রবণতা খুব কম;
• বাংলাদেশের কোন কোন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীদের মাঝে এইচআইভির ব্যাপকতা (NASP সকল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যৌনরোগের (STDs) উচ্চ প্রবণতা
• দেশব্যাপী নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা।
কৈশোর/যৌবন পূর্বকালকে বলা হয়ে থাকে মানুষের জীবনে ঝড়-ঝঞ্জার সময়। এ সময়ের শারীরিক পরিবর্তনের সংগে পাল্লা দিয়ে মনোজগতেও ঘটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন । UNAIDS (2007) এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর নতুনভাবে এইচআইভি সংক্রমিতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি হচ্ছে ২৫ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরী/যুবক-যুবতী। তাদের বয়স, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন এবং আর্থিক নির্ভরশীলতাসহ নানাবিধ কারণে কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতীরা এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। বিশ্বব্যাপী পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায়: (ক) অল্প বয়সিরা এইচআইভি এবং এইডস এর কথা শুনে থাকলেও এ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যাপারে তারা সচেতন নয়; (খ) যৌনকর্মে সতিনা অল্প বয়সিদের অনেকেই মনে করে না যে তারা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে; এবং (গ) যৌনরোগের প্রাদুর্ভাব যুব-কিশোরদের মধ্যেই বেশি। এছাড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে সুযোগের অভাব এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতা বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের যুবসমাজকে এইচআইডি সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
অধিকন্তু, বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী পুরুষের চেয়ে নারী এবং শিশুরাই এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হয় বেশি। ২০০৭ সালের শেষ নাগাদ সমগ্র বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমিত জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫০% ছিল নারী। আফ্রিকা মহাদেশের সাব-সাহারান দেশগুলোতে এর হার কোন কোন ক্ষেত্রে ৬০% এর বেশি (UNAIDS/WHO, 2007)। বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের বিরাজমান আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে নারীর দুর্বল অবস্থান, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব, অল্প বয়সে বিয়ে, পুরুষের আধিপত্য, নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীদের গৌণ ভূমিকা ইত্যাদি | বিভিন্ন কারণে পুরুষের তুলনায় নারীরা এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে (Amanullah, ২০০২)।
• শারীরিক পরিবর্তন ও বয়সের আবেগ বা কৌতূহলী মনোভাব;
• শিক্ষার সুযোগের অভাব ও অজ্ঞতা: অল্প বয়সিরা এইচআইভি ও এইডস-এর কথা শুনে থাকলেও এ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যাপারে তারা সচেতন নয় এবং যৌনকর্মে সক্রিয় অল্প বাসিদের অনেকেই মনে করে না যে তারা এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
• স্বাস্থ্যসেবা সুযোগের অভাব,
• আর্থিক অসমর্থতা; এবং
• যৌনরোগ এর প্রাদুর্ভাব যুব-কিশোরদের মধ্যে বিরাজমান ।
UNAIDS (২০০৮) এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৭,৪০০ (সাত হাজার চারশত) মহিলা ও পুরুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে যাদের অর্ধেকের বয়সই ১৫-২৪ বছরের মধ্যে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মহিলা।
• আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে মেয়েদের দুর্বল অবস্থান:
• ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এইচআইভি এবং এইডস বিষয়ে অধিক অজ্ঞতা;
• নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণে পুরুষ দ্বারা মেয়েদের নিগৃহীত হওয়া নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীদের গৌণ ভূমিকা • অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে মেয়েদের বাধাদানের ক্ষমতার অভাব;
• মেয়েদের বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য: ছেলে থেকে মেয়ের দেহে এইচআইভি সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা মেয়ের থেকে ছেলের দেহে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনার চেয়ে প্রায় দুই থেকে চার গুণ বেশি;
• যৌন কৌতূহল ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক;
• সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অভাব:
• প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব; এবং
• অল্প বয়সে বিয়ে।
• একাধিক ব্যক্তির একই সিরিজ/সুই ব্যবহার;
• পেশাগত রক্ত বিক্রি;
• অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক ;
• সমকামিতা; এবং
• যৌনকর্ম (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া)।
এইচআইভি এবং এইডস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে 'না' বলা একটি বড় কৌশল। অল্প বয়সি ছেলে-মেয়েরা প্রায়শই আবেগ দ্বারা চালিত হয়, যুক্তি দ্বারা নয় । জীবনের সমস্যা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে অনেক সময় 'না' বলার প্রয়োজন হয় এবং নিজ মত প্রতিষ্ঠা করতে হয়, যা অল্প বয়সিদের জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ।
এমন হতে পারে যে, একজন শিক্ষার্থী তার সহপাঠী বা প্রিয় বন্ধুর একটি প্রস্তাব পেল যা তাকে যৌন আচরণ করতে প্ররোচিত অথবা মাদকাসক হতে প্রভাবিত করতে পারে। শিক্ষার্থী কিছুতেই এ প্রস্তাব মানতে চায় না, আবার বন্ধুত্বও নষ্ট করতে চায় না। এমন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে 'না' বলতেই হবে । একবার এবং বারবার। সহপাঠী বন্ধুটি এবং অন্যরা তাকে জোর করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাকে দৃঢ়চেতা হতে হবে।
• যুক্তি দেখাতে হবে;
• প্রস্তাবের ক্ষতিকর বিষয়টি তুলে ধরতে হবে; এবং
• নিজ অবস্থানের দৃঢ়তা প্রকাশ করতে হবে ও 'না' বলতে হবে।